গ্যালারি

ইসলামে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা – ১

শাইখ সালেহ ইবন ফাউযান আল-ফাউযান
যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যিনি সমগ্র জাহানের প্রতিপালক, আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক আমাদের প্রাণ-প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর, তার পরিবার-পরিজন ও সাথী-সঙ্গীদের উপর এবং তাদের উপর যারা তার প্রদর্শিত পথের অনুসারী।একজন ঈমানদারের উপর ওয়াজিব হল, আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মহব্বতের সাথে সাথে আল্লাহর বন্ধুদের মহব্বত করা ও তার শত্রুদের সাথে দুশমনি করা।আল্লাহর বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব থাকা এবং আল্লাহর দুশমনদের সাথে শত্রুতা থাকা একজন মুমিনের ঈমানের পরিচয় এবং এটি ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ রোকন। যার মধ্যে এ গুণ থাকবে না সে সত্যিকার ঈমানদার হতে পারে না। ঈমানদার হতে হলে অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বন্ধুত্ব এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শত্রুতা তার মধ্যে থাকতে হবে, অন্যথায় ঈমানদার হওয়া যাবে না। আর এটি ঈমানের একটি অন্যতম অংশ এবং ঈমানের সাথে আঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যাদের মধ্যে ঈমানের এ মান-দণ্ড থাকবে না, তাদের ঈমান থাকবে না।

ইসলামী আক্বীদার অন্যতম ভিত্তি হল, দ্বীনের উপর বিশ্বাসী সব ঈমানদার মুমিনের সাথে বন্ধুত্ব রাখা। আর যারা এ দ্বীন-ইসলামকে বিশ্বাস করে না, আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আনে না এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনে না, সে সব মুশরিক ও কাফেরদের সাথে দুশমনি রাখা এবং তাদের ঘৃণার চোখে দেখা। সুতরাং মনে রাখতে হবে, যারা তাওহীদে বিশ্বাসী-মুখলিস ঈমানদার তাদের মহব্বত করা এবং তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা হল ঈমানের বহি:প্রকাশ। আর যারা মুশরিক- গাইরুল্লাহর ইবাদত করে- তাদের অপছন্দ ও ঘৃণা করা ঈমানদার হওয়ার প্রমাণ স্বরূপ। আর এটিই হল ইব্রাহীম আ. ও তার অনুসারীদের জন্য আল্লাহর রাব্বুল আলামীন কর্তৃক মনোনীত দ্বীন, যে দ্বীনের আনুগত্য করার জন্য আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে করীমে এরশাদ করে বলেন,

“ইবরাহীম ও তার সাথে যারা ছিল তাদের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। তারা যখন স্বীয় সম্প্রদায়কে বলছিল, ‘তোমাদের সাথে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যা কিছুর উপাসনা কর তা হতে আমরা সম্পূর্ণ মুক্ত। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি; এবং উদ্রেক হল আমাদের- তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন। তবে স্বীয় পিতার প্রতি ইবরাহীমের উক্তিটি ব্যতিক্রম: ‘আমি অবশ্যই তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করব আর তোমার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আমি কোন অধিকার রাখি না।’ হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা আপনার ওপরই ভরসা করি, আপনারই অভিমুখী হই আর প্রত্যাবর্তন তো আপনারই কাছে”। [সূরা মুমতাহিনা, আয়াত: ৪]

আর এটা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বীনের অনুকরণের নামান্তর। এখানে কোন ভিন্নতা ও পার্থক্য নাই[1]।  আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,

“হে মুমিনগণ, ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে তোমরা বন্ধরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়েত দেন না”। [সূরা মায়েদাহ, আয়াত: ৫১]

এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিতাবিদের সাথে বন্ধুত্ব করার বিধান কি তার বর্ণনা দেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিতাবিদের সাথে বন্ধুত্ব করতে এবং তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেন[2]। অপর এক আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কাফেরদেরও বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেন। কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করা হারাম হওয়া বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

“হে ঈমান-দারগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না”[3]। [সূরা মুমতাহানাহ, আয়াত: ১]

এ বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন, কাফেররা যদি মুমিনদের আত্মীয়-স্বজন বা রক্ত সম্পর্কীয় ও গোত্রীয় লোকও হয়, তাদের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব এবং তাদের খালেস মহব্বত করতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

“হে ঈমান-দারগণ, তোমরা নিজদের পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরিকে প্রিয় মনে করে। তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদেরকে বন্ধরূপে গ্রহণ করে তারাই যালিম”। [সূরা তাওবাহ, আয়াত: ২৩]

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,

“যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনে তুমি পাবে না এমন জাতিকে তাদেরকে পাবে না এমন লোকদের সাথে বন্ধুত্ব করতে বন্ধু হিসাবে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, যদি সেই বিরুদ্ধবাদীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয় তবুও। এদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা তাদের শক্তিশালী করেছেন। তিনি তাদের প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতসমূহে যার নিচে দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এরা হল আল্লাহর দল। জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর দলই সফলকাম”। [সূরা মুজাদালাহ, আয়াত: ২২][4]

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হল, বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ দ্বীনের এ গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতিকে একেবারেই ভুলে গেছে[5]

এমনকি আমি আরবি একটি টিভি চ্যানেলে একজন বিশিষ্ট আলেম ও দা‘য়ীকে বলতে শুনেছি, তিনি খৃষ্টানদের সম্পর্কে বলেন, তারা আমাদের ভাই। এটি একটি মারাত্মক কথা যার সমর্থনে কোন দলীল-প্রমাণ নাই[6]

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেভাবে ইসলামী আকীদায় অবিশ্বাসী কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করাকে হারাম করেছেন এবং তাদের ঘৃণা করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবে যারা ঈমান এনেছে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা ও তাদের মহব্বত করাকেও ওয়াজিব করেছেন।[7]  আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

“তোমাদের বন্ধু কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ, যারা সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে বিনীত হয়ে। আর যে আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের সাথে বন্ধুত্ব করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহর দলই বিজয়ী”। [সূরা মায়েদাহ, আয়াত: ৫৫]

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,

“মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়”[8]। [সূরা ফাতহ, আয়াত: ২৯]

“নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।  [সূরা হুজরাত, আয়াত: ১০]

সুতরাং মুমিনগণ পরস্পর ভাই, এ ভ্রাতৃত্ব দ্বীন ও আকীদার ভিত্তিতে; যদিও দেশ, বংশ ও সময়ের দিক থেকে তাদের মধ্যে দুরত্ব থাকুক।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন করীমে এরশাদ করে বলেন,

“যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে: ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু”। [সূরা হাসর, আয়াত: ১০]

মোট কথা, সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মুমিনরা একে অপরের ভাই। তাদের ঘর-বাড়ী, স্থান-কাল ও সীমা-রেখা যতই দূরে থাকুক না কেন, তা বিবেচনার বিষয় নয়, তারা আল্লাহ ও তার রাসূলে বিশ্বাসী কিনা তা হল মুল বিবেচনার বিষয়। ঈমানের দিক দিয়ে তাদের একের সাথে অপরের সম্পর্ক খুবই গভীর। পরবর্তী যুগের মুমিনরা তাদের পূর্ববর্তীদের অনুকরণ করবে, তাদের জন্য দো‘আ করবে, ক্ষমা চাইবে।

শত্রুতা ও বন্ধুত্বের নিদর্শন

প্রথমত: কাফেরদের সাথে বন্ধুত্বের নিদর্শন:

এক. কথা-বার্তা লেবাস-পোশাক ইত্যাদিতে অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা:

লেবাস-পোশাক, চাল-চলন ও কথা-বার্তা ইত্যাদিতে অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করা, তাদের সাথে বন্ধুত্বকেই প্রমাণ করে[9]। সে কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকবে”[10]

যে সব আচার-আচরণ, কথা-বার্তা, আখলাক-চরিত্র ইত্যাদি কাফেরদের বৈশিষ্ট্য, সে সব বিষয়ে তাদের অনুকরণ করা সম্পূর্ণ হারাম। যেমন- দাড়ি মুণ্ডন, গোফ বড় করা, প্রয়োজন ছাড়া তাদের সংস্কৃতিতে কথা বলা, তারা যে সব পোশাক পরিধান করে, তা পরিধান করা, তারা যে সব খাদ্য গ্রহণ করে, তা গ্রহণ করা, ইত্যাদি[11]

দুই. অমুসলিম দেশে অবস্থান করা, দ্বীনের হেফাজতের জন্য অমুসলিম দেশ থেকে মুসলিম দেশে হিজরত করা হতে বিরত থাকা:

যখন একজন মুসলিম ব্যক্তি কোন অমুসলিম দেশে তার দ্বীনের বিষয়ে আশঙ্কা করবে, তাকে অবশ্যই দ্বীনের হেফাজতের জন্য কাফেরদের দেশ ত্যাগ করে কোন মুসলিম দেশে হিজরত করতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে প্রতিটি মুসলিমের উপর তার দ্বীনের হেফাজতের জন্য হিজরত করা ওয়াজিব। কারণ, দ্বীনের বিষয়ে আশঙ্কা করার পরও কাফের দেশে অবস্থান করা, কাফেরদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা ও তাদের সাথে বন্ধুত্ব করার প্রমাণ বহন করে। এ কারণেই হিজরত করতে সক্ষম, এমন ব্যক্তির জন্য কোন কাফেরদের মাঝে অবস্থান করা আল্লাহ হারাম ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, 

“নিশ্চয় যারা নিজদের প্রতি যুলমকারী, ফেরেশতারা তাদের জান কবজ করার সময় বলে, ‘তোমরা কি অবস্থায় ছিলে’? তারা বলে, ‘আমরা জমিনে দুর্বল ছিলাম’। ফেরেশতারা বলে, ‘আল্লাহর জমিন কি প্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা তাতে হিজরত করতে’? সুতরাং ওরাই তারা যাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম। আর তা মন্দ প্রত্যাবর্তন-স্থল। তবে দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশু যারা কোন উপায় অবলম্বন করতে পারে না এবং কোন রাস্তা খুঁজে পায় না। অতঃপর আশা করা যায় যে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল। [সূরা আন-নিসা: ৯৭-৯৯]

আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনদের জন্য হিজরত করাকে ফরয করে দিয়েছেন। একমাত্র দুর্বল যারা হিজরত করতে অক্ষম তাদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অমুসলিম দেশে অবস্থান করার অনুমতি দিয়েছেন[12]

অনুরূপভাবে যাদের কাফেরদের দেশে থাকার দ্বারা ইসলাম ও মুসলিমের কোন উপকার ও কল্যাণ রয়েছে, তাদের জন্য কাফেরদের দেশে থাকার অনুমতি ইসলাম দিয়েছে। যেমন- কাফেরদের দেশে কাফেরদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে পারে, তাদের মধ্যে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরতে পারে এবং ইসলামের প্রচার করতে পারে। এ ধরনের লোকের জন্য কাফের দেশে অবস্থান করাতে কোন অসুবিধা বা গুনাহ নাই। তারা সেখানে অবস্থান করে মুসলিমদের পক্ষে কাজ করবে।

তিন- বিনোদন ও পর্যটনের উদ্দেশ্যে তাদের দেশে ভ্রমণ করা:

প্রয়োজন ব্যতীত কাফেরদের দেশে ভ্রমণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে প্রয়োজনীয় কাজে ভ্রমণ করাতে কোন অসুবিধা নাই। যেমন, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, উচ্চ শিক্ষা লাভ, বিশেষত: এমন কোন ডিগ্রি হাসিল, যা তাদের দেশে যাওয়া ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয়, এ ধরনের কোন প্রয়োজনীয় কাজের জন্য ভ্রমণ করা বৈধ। তখন এ সব প্রয়োজনের খাতিরে তাদের দেশে সফর করা ও সেখানে সাময়িক অবস্থান করাতে কোন গুনাহ হবে না। আর একটি কথা মনে রাখতে হবে, যে সব প্রয়োজনের তাগিদে তাদের দেশে ভ্রমণ করা যেতে পারে, প্রয়োজন শেষ হওয়ার সাথে সাথে তার জন্য মুসলিমদের দেশে ফিরে আসা ওয়াজিব। সেখানে কাল ক্ষেপণ করা বা বিনোদনের উদ্দেশ্যে ঘুরা-ফেরা করা কোন ক্রমেই উচিত না।

এ ধরনের সফর বৈধ হওয়ার জন্য শর্ত হল, সে সেখানে নিজের দ্বীন প্রকাশ করার ক্ষমতা থাকতে হবে, মুসলিম হওয়ার কারণে তার মধ্যে কোন প্রকার সংকোচ ও হীনমন্যতা থাকতে পারবে না। মুসলিম হওয়ার কারণে তার সম্মানবোধ থাকতে হবে। অমুসলিমের দেশে যে সব অন্যায়, অনাচার ও কু-সংস্কার  সংঘটিত হয়, তার থেকে দূরে থাকতে হবে। শত্রুদের ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়া থেকে সাবধান থাকতে হবে। অনুরূপভাবে যদি কারো জন্য অমুসলিম দেশে ইসলামের দাওয়াত দেয়া ও ইসলাম প্রচারের কাজ করার সুযোগ হয়, তখন তার জন্য অমুসলিম দেশে অবস্থান করা বৈধ, আবার কখনও কখনও ওয়াজিব।

চার. মুসলিমদের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করে তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা করা, তাদের প্রশংসা করা ও তাদের হয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করা:

মুসলিমদের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করে তাদের সহযোগিতা করা মারাত্মক অপরাধ ও বড় গুনাহ। যারা এ ধরনের কাজ করে, তারা কোন ক্রমেই মুসলিম হতে পারে না। এ কাজটি হল, ইসলাম বিনষ্টকারী ও ঈমান হারা হওয়ার অন্যতম উপকরণ। এ ধরনের কাজ করলে সে মুরতাদ বা বেঈমান বলে গণ্য হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের এ ধরনের কাজ করা হতে নাজাত দান করুন।

পাঁচ. অমুসলিমদের থেকে সাহায্য কামনা করা, তাদের কথার উপর ভরসা করা, তাদেরকে মুসলিমদের গোপন বিষয়াদি সম্বলিত বিভিন্ন বড় বড় পোষ্টে চাকুরী দেয়া, তাদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু নির্বাচন করা, তাদেরকে পরামর্শক হিসেবে গ্রহণ করা[13]

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

“হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের সর্বনাশ করতে ত্রুটি করবে না। তারা তোমাদের মারাত্মক ক্ষতি কামনা করে। তাদের মুখ থেকে তো শত্রুতা প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে। আর তাদের অন্তরসমূহ যা গোপন করে তা মারাত্মক। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্ট বর্ণনা করেছি। যদি তোমরা উপলব্ধি করতে। শোন, তোমরাই তো তাদেরকে ভালবাসা এবং তারা তোমাদেরকে ভালবাসে না। অথচ তোমরা সব কিতাবের প্রতি ঈমান রাখ। আর যখন তারা তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’। আর যখন তারা একান্তে মিলিত হয়, তোমাদের উপর রাগে আঙ্গুল কামড়ায়। বল, ‘তোমরা তোমাদের রাগ নিয়ে মর’! নিশ্চয় আল্লাহ তারা যা করে, তা পরিবেষ্টনকারী”[14]। যদি তোমাদেরকে কোন ভালো কিছু স্পর্শ করে তখন তাদেরকে কষ্ট দেয়, আর যদি তোমাদের উপর কোন বিপদ-কষ্ট আপতিত হয়, তখন তারা তাতে খুশি হয়। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১৮-১২০]

এ সব আয়াতগুলো কাফেরদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা দেয় এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে তারা যে সব দুশমনি, ষড়যন্ত্র, প্রতারণা ও ধোঁকা দেয়ার মানসিকতা গোপন করে, তা উম্মোচণ করে দেয়। এ ছাড়াও এ সব আয়াত কাফেররা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে সব খিয়ানত, ধোঁকাবাজি ও মিথ্যাচার করত, তার বর্ণনাকে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছ। যখন মুসলিমরা তাদের প্রতি বিশ্বাস করবে, তখন তারা এটিকে সুযোগ মনে করে তা তাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগাবে। তাদের কাজই ছিল, কীভাবে মুসলিমদের ক্ষতি করা যায়, তার চক আঁকা এবং তাদের থেকে উদ্দেশ্যে হাসিল করার পন্থা আবিষ্কার করা।

ইমাম আহমদ রহ. বলেন, আবু মুসা আশয়ারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

একদিন আমি ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলি, আমার একজন সচিব আছে, সে খৃষ্টান। এ কথা শুনে তিনি বললেন, আল্লাহ তোমার অমঙ্গল করুন! তুমি খৃষ্টানকে কেন তোমার সচিব বানালে? তুমি কি আল্লাহ তা’আলার বাণী শুনোনি? আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহুদি ও খৃষ্টানদের বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। তারা নিজেরা পরস্পর বন্ধু”। [সূরা মায়েদাহ, আয়াত: ৫১]

তুমি একজন খাটি মুসলিমকে কেন তোমার কাতেব বানালে না। তার কথা শুনে আমি বললাম, হে আমীরুল মুমীনিন! আমি তার থেকে কিতাবত আদায় করব, আর সে তার দ্বীন আদায় করবে। উত্তরে তিনি বলেন, আল্লাহ যাদের অপমান করে আমি তাদের সম্মান করব না। আর আল্লাহ যাদের বে-ইজ্জত করে আমি তাদের ইজ্জত দেবো না এবং আমি তাদেরকে কাছে টানবো না, যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের দূরে ঠেলে দিয়েছেন।

ইমাম আহমদ রহ. ও ইমাম মুসলিম রহ. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের যুদ্ধে বের হলে, একজন মুশরিক তার সাথে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য ‘হাররাহ’ নামক স্থানে এসে মিলিত হয়। সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলে, আমি তোমার সাথে যুদ্ধে যেতে চাই এবং তোমার সাথে যুদ্ধ অংশ গ্রহণ করব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনয়ন কর? সে বলল, না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি ফেরৎ যাও! আমরা কোন মুশরিক হতে সাহায্য গ্রহণ করব না[15]

উল্লেখিত আয়াত ও হাদিসসমূহ দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয়, মুসলিমদের কর্মের দায়িত্ব বা নেতৃত্ব যদ্বারা সে মুসলিমদের যাবতীয় সব কার্য-কলাপ বিষয়ে অবগত হয়, তা কখনোই কোন অমুসলিমদের হাতে দেয়া উচিত নয়। মুসলিমদের কোন গোপন তথ্য তাদের নিকট প্রকাশ পায় এবং তাদের ক্ষতির কারণ হয়, এ ধরনের কোন কাজে তাদের সম্পৃক্ত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ, তারা যখন মুসলিমদের গোপনীয় বিষয়গুলো জানতে পারবে এবং তাদের দুর্বলতাগুলো তাদের নিকট প্রকাশ পাবে, তখন তারা মুসলিমদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাবে। এ ধরনের ঘটনা বর্তমান যুগে অহরহ সংঘটিত হচ্ছে এবং যার পরিণতি মুসলিমদের ভোগ করতে হচ্ছে। অমুসলিমরা তাদের দেশের নাগরিকদের মুসলিম দেশসমূহে বিভিন্ন কাজের অজুহাতে প্রেরণ করছে, যাতে তারা মুসলিমদের সাথে মিশে তাদের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে সৌদি আরব- যেখানে হারা-মাইন শরিফাইন- আছে সেখানে অসংখ্য অমুসলিমদের বিভিন্ন কাজের অজুহাতে পাঠানো হচ্ছে। তাদেরকে সেখানে ড্রাইভার, বাড়ীর পাহারাদার, ঘরের কর্মচারী ইত্যাদি বানানো হচ্ছে। এ ছাড়াও তাদেরকে পরিবারের সাথে অবাধে মেলা-মেশা করার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।

ছয়. অমুসলিমদের ক্যালেন্ডার অনুসারে তাদের তারিখ নির্ধারণ করা, বিশেষ করে যে ক্যালেন্ডার অমুসলিমদের নিজস্ব ধর্মীয় ইবাদত-ঐতিহ্য ও পর্বের হিসাব অনুসারে নির্ধারিত। যেমন জিওগ্রেরিয়ান ক্যালেন্ডার (ইংরেজি বা ঈসায়ী ক্যালেন্ডার হিসেবে যা আমাদের কাছে পরিচিত)।

ইংরেজী বর্ষপঞ্জী বস্তুত: ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের স্মরনিকা হিসেবে প্রবর্তিত হয়েছে। মূলত: ঈসা আ. এর জন্মদিন পালন খৃষ্টানরা তাদের নিজেদের পক্ষ থেকে আবিষ্কার করেছে। বাস্তবে এটি ঈসা আ. এর ধর্মের কোন রীতিনীতিতে পড়ে না। সুতরাং এ বর্ষপঞ্জী ব্যবহার খৃষ্টানদের সাথে তাদের ধর্মীয় রীতি-নীতি ও পর্বে মুসলিমদের অংশ গ্রহনেরই নামান্তর।

অমুসলিমদের বর্ষপঞ্জীর অনুসরণ-অনুকরণ থেকে বিরত থাকার জন্যই মুসলিমদের ইচ্ছা ও তাদের দাবির প্রেক্ষাপটে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খেলাফত আমলে মুসলিমদের জন্য স্বতন্ত্র ইতিহাস ও হিজরি সনের প্রবর্তন করা হয়। তারপর থেকে মুসলিমরা অমুসলিমদের সন গণনা করা হতে বিরত থাকে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিজরতের বছর থেকে হিজরি সন গণনা করা হয়। এ ঘটনা দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয়, সন গণনার ক্ষেত্রে মুসলিমদের জন্য অমুসলিমদের বিরোধিতা করা ও যে সব বিষয়গুলো তাদের বৈশিষ্ট্য বলে স্বীকৃত সে সব বিষয়ে তাদের বিরোধিতা করা ওয়াজিব। আল্লাহ আমাদের সহযোগিতা করুন।

সাত. অমুসলিমদের উৎসব, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করা, তাদেরকে তাদের অনুষ্ঠান পালনে সহযোগিতা করা, তাদের অনুষ্ঠান উপলক্ষে তাদের সম্ভাষণ জানানো, ধন্যবাদ দেয়া ও তাদের অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত হওয়া: 
 সূরা ফুরকানের ৭২ নং আয়াতের তাফসীরে বলা হয়ে থাকে- রহমানের বান্দাদের গুণ হল, তারা কাফের, মুশরিকদের অনুষ্ঠান ও উৎসবে হাজির হয় না।
আট. অমুসলিমদের ভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস ও বাতিল দ্বীনের প্রতি লক্ষ্য না করে, তাদের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও আচার- আচরণ, তাদের চরিত্র ও ব্যবহারের প্রশংসা ও খুশি প্রকাশ করা এবং তাদের কর্ম দক্ষতা ও নিত্য নতুন আবিষ্কার ও তাদের কর্মে অভিভূত হওয়া।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের বিষয়ে বলেন,

“আর তুমি কখনো প্রসারিত করো না তোমার দু’চোখ সে সবের প্রতি, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে দুনিয়ার জীবনের জাঁক-জমকস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি। যাতে আমি সে বিষয়ে তাদেরকে পরীক্ষা করে নিতে পারি। আর তোমার রবের প্রদত্ত রিযক সর্বোৎকৃষ্ট ও অধিকতর স্থায়ী”[16]। [সূরা ত্বাহা. আয়াত: ১৩১]

আয়াতের অর্থ এ নয়, মুসলিমরা দুনিয়ার বিষয়ে কোন প্রকার মাথা ঘামাবে না এবং জাগতিক বা দুনিয়াবি কোন শক্তি সামর্থ্য তারা অর্জন করবে না, বা তারা বিভিন্ন ধরনের আবিষ্কার ও কারিগরি শিক্ষা অর্জন বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে না এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামরিক শক্তি অর্জন করা হতে বিরত থাকবে। বরং মুসলিমরা এ ধরনের কাজগুলো অবশ্যই উদ্দেশ্য।  আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, 

“আর তাদের মুকাবিলার জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি ও অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত কর”। [সূরা আনফাল, আয়াত: ৬০]

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ সব উপকরণ ও বর্তমান দুনিয়ার নব্য আবিষ্কারগুলোর ক্ষেত্রে মুসলিমদের অবদানই বেশি। তাদের এ অবদানের কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ বিষয়ে কুরআনে করীমে এরশাদ করে বলেন,

“বল, ‘কে হারাম করেছে আল্লাহর সৌন্দর্য উপকরণ, যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র রিয্ক’? বল, ‘তা দুনিয়ার জীবনে মুমিনদের জন্য, বিশেষভাবে কিয়ামত দিবসে’। এভাবে আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি এমন কওমের জন্য, যারা জানে”। [সূরা আরাফ. আয়াত: ৩২][17]

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,

 “আর যা কিছু রয়েছে আসমানসমূহে এবং যা কিছু রয়েছে জমিনে, তার সবই তিনি তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। চিন্তাশীল কওমের জন্য নিশ্চয় এতে নিদর্শনা-বলী রয়েছে”[18]। [সূরা আল-জাসিয়া. আয়াত: ১৩]

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,

“তিনিই জমিনে যা আছে সব তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন”। [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৯]

সুতরাং মুসলিমদের উপর কর্তব্য হবে এ সমস্ত উপকারী বিষয় ও শক্তিসমূহের প্রতি সর্বাগ্রে মনোযোগী হবে। তারা নতুন নতুন আবিষ্কার ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অমুসলিমদের তুলনায় অগ্রগামী থাকবে। অমুসলিমরা যাতে এ ধরনের কাজের কোন সুযোগ না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখবে। আর মুসলিমরা যাতে তাদের মুখাপেক্ষী না হতে হয়, সে বিষেয়ে সতর্ক থাকবে। বরং যাবতীয় কারখানা ও কারিগরী জ্ঞান মুসলিমদেরই থাকবে।

নয়. অমুসলিমদের নামে মুসলিম বাচ্চাদের নাম রাখা:

বিজাতিদের অনুকরণ করতে করতে আমাদের অবনতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, আমরা এখন আমাদের বাচ্চাদের নামও অমুসলিমদের নামের সাথে মিলিয়ে রাখি। অথচ মুসলিম মনীষীদের অনেক সুন্দর সুন্দর নাম আছে, যা আমরা আমাদের বাচ্চাদের জন্য বাচাই করতে পারি। কিন্তু তা আমরা করি না। বর্তমানে অনেক মুসলিমকে দেখা যায়, তারা তাদের নিজেদের বাচ্চাদের নাম অমুসলিমদের নামের সাথে মিলিয়ে রাখে। মুসলিম মনীষীদের সাথে তাদের বাচ্চাদের নাম মিলিয়ে রাখা হতে তারা বিরত থাকে। তারা তাদের নিজেদের বাপ-দাদা ও পূর্ব-পুরুষদের যে সব সুন্দর নাম আছে, বা মুসলিমদের যে সব পরিচিত নাম আছে সেগুলো দ্বারা তাদের বাচ্চাদের নাম করণ হতে বিরত থাকে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

خَيْرُ الْأَسْمَاءِ عَبْدُ اللَّهِ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ

“উত্তম নাম হল, আব্দুর রহমান ও আব্দুল্লাহ”[19]

মুসলিমদের নামের মধ্যে বিকৃতির কারণে দেখা যায়, বর্তমানে একটি প্রজন্ম এমন তৈরি হয়েছে, যারা পশ্চিমাদের নামে তাদের নিজেদের বাচ্চাদের নাম রাখা আরম্ভ করছে। এ কারণে বর্তমান প্রজন্ম ও অতীত প্রজন্মের সাথে একটি ফাটল তৈরী হয়েছে। আগের মানুষদের নাম দ্বারাই জানা যেত যে, এরা মুসলিম। তাদের নামের একটি ঐতিহ্য ছিল। কিন্তু বর্তমানে নাম শুনলে বোঝা যায় না, তারা মুসলিম নাকি অমুসলিম।

দশ. অমুসলিমদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ প্রার্থনা করা:

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অমুসলিমদের জন্য দো‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করাকে হারাম করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-

“নবী ও মুমিনদের জন্য উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা আত্মীয় হয়। তাদের নিকট এটা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যে, নিশ্চয় তারা প্রজ্বলিত আগুনের অধিবাসী”। [সূরা তাওবা, আয়াত: ১১৩]

আয়াত দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয়, কাফির, মুশরিক ও বেঈমানরা অবশ্যই চির জাহান্নামী। তারা কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। যখন কোন মানুষের নিকট এ কথা স্পষ্ট হয়, লোকটি কাফের বা মুশরিক তখন তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং তার দো‘আ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদিও সে তার নিকটাত্মীয় বা মাতা-পিতা হোক। কারণ, তাদের জন্য দো‘আ করা বা ক্ষমা প্রার্থনা দ্বারা প্রমাণিত হয়, মুসলিমরা তাদের মহব্বত করে এবং তারা যে ভ্রান্ত ও বাতিল দ্বীনের উপর আছে তা সঠিক। অন্যথায় তাদের জন্য কেন ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং দো‘আ করবে?।

পাদটীকাঃ  

[1] আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ কথা স্পষ্ট করেন, মুশরিকদের সাথে কোন আপোষ নাই। মুসলিমরা কখনোই মুশরিকদের সাথে একত্র হতে পারে না। ইব্রাহীম আ. তার কাওকে জানিয়ে দেন, আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যে সব দেব-দেবী ও উপাস্যের উপাসনা কর, তার থেকে আমি সম্পূর্ণ মুক্ত। আমার সাথে তোমাদের উপাস্যদের কোন সম্পর্ক নাই। ইব্রাহীম আ. তার কওমের মুশরিকদের আরও জানিয়ে দেন, তোমাদের সাথে আমার শত্রুতা কোন ক্ষণিকের জন্য নয়, বরং তা চিরকালের জন্য; যতদিন পর্যন্ত তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান আনবে না, ততদিন পর্যন্ত তোমাদের সাথে আমার শত্রুতা বহাল থাকবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইব্রাহীম আ. এর দৃঢ়তাকে কুরআনে তুলে ধরেন এবং তিনি উম্মতে মুসলিমাকে বলেন, তোমাদের জন্য ইব্রাহীম আ. এর মধ্যে রয়েছে, উত্তম আদর্শ। সুতরাং, মনে রাখতে হবে মুসলিমদের জন্য অমুসলিমদের সাথে আপোষহীন হতে হবে, যতদিন পর্যন্ত তারা ঈমান না আনবে, ততদিন পর্যন্ত তাদের সাথে কোন আপোস নাই। [অনুবাদক]।

[2] ব্যাখ্যা: আয়াতে আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে জানিয়ে দিয়ে বলেন, আমি যাদের  কিতাব দিয়েছি, অর্থাৎ ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদেরকে কখনোই তোমাদের বন্ধু বানাবে না। কারণ, তারা কখনোই তোমাদেরকে তাদের নিজেদের আপন মনে করে না, তারা সব সময় তোমাদেরকে তাদের শত্রু হিসেবে গণ্য করে। আর তারা সব সময় মুসলিমদের ক্ষতির অনুসন্ধান করে। তারপরও যারা কিতাবিদের সাথে বন্ধুত্ব করবে আল্লাহ তাদের বিষয়ে বলেন, তারা সে সব জাতিরই অন্তর্ভুক্ত হবে, তারা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। [অনুবাদক]।

[3] ব্যখ্যা: আয়াতে আল্লাহ মুমিনদের কাফেরদের নির্যাতনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। অর্থাৎ, তোমরা তাদের কিভাবে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে? তারা তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে যে হেদায়েতের মিশন এসেছে, তা অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করছে এবং তোমাদেরকে কোন প্রকার অপরাধ ছাড়া তোমাদের বাড়ি-ঘর হতে বের করে দিয়েছে, তোমাদের ভিটা-বাড়ি ছাড়া করেছে। সুতরাং, তোমরা তাদেরকে কখনোই বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।

[4] অর্থাৎ যারা আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলে বিরোধিতা করে, তারা যদি তোমাদের নিকটাত্মীয়ও হয়ে থাকে; তোমাদের মাতা-পিতাও হয়ে থাকে, তারপরও তাদের সাথে কোন প্রকার বন্ধুত্ব চলে না।

[5] তারা অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করাকে তাদের উদারতা, উগ্রবাদ বিরোধিতা ও অসাম্প্রদায়িকতা বলে চালিয়ে যাচ্ছে। তারা মনে করে অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা ও তাদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখা উদারপন্থী ও অসাম্প্রদায়িক হওয়ার প্রমাণ। মনে রাখতে হবে, যে সব মুসলিম এ ধরনের মন-মানসিকতা পোষণ করে তারা কখনোই ঈমানদার হতে পারে না। তারা ইয়াহুদী খৃষ্টানদের দোষর এবং আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের দুশমন। আমাদের সমাজে এ ধরনের ঘাতকের অভাব নাই। [অনুবাদক]।

[6] এ ধরনের কথা শুধু মারাত্মকই নয়, বরং ঈমানের জন্য হুমকি। যারা এ ধরনের কথা বলে, তাদের ঈমান প্রশ্নবিদ্ধ। আল্লাহ আমাদের এ ধরনের কথা-বার্তা থেকে হেফাজত করুক।

[7] একজন ঈমানদারের প্রতি অপর ঈমানদারের ভালোবাসা ও মহব্বত থাকতে হবে এবং তাদের বিপদ-আপদে এগিয়ে আসতে হবে।

[8] ব্যাখ্যা: আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও কাফেরদের বিপক্ষে তাদের অবস্থানের একটি চিত্র তুলে ধরেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, মুমিনরা পরস্পরের প্রতি অতীব সদয় ও দয়া পরবশ। তারা তাদের ছোটদের স্নেহ করে বড়দের সম্মান করে। তাদের মধ্যে কোন প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ নাই। কিন্তু দুশমনদের বিরুদ্ধে তারা অত্যন্ত কঠিন। তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আপোষ নাই। দুশমনদের মোকাবেলায় তারা এক। [অনুবাদক]।

[9] মুমিনরা কখনোই অমুসলিমদের অনুকরণ করতে পারে না। তারা সব সময় তাদের নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখবে। নিজেরা মানব জাতির জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবে। তাদের আদর্শের প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হবে। তারা কেন বিজাতিদের আদর্শের অনুকরণ করবে? তারা সব সময় বিজাতিদের কৃষ্টি-কালচার ও সংস্কৃতির বিরোধিতা করবে এবং তাদের অন্ধানুকরণ হতে দূরে থাকবে। [অনুবাদক]।

[10] আবু দাউদ কিতাবুল লিবাস, পরিচ্ছেদ: প্রসিদ্ধ পোশাক পরিধান বিষয়ে।

বস্তুত মুসলিমদের জন্য তাদের আলাদা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য রয়েছে। তাদের ঐতিহ্যকে মানুষ অনুসরণ করবে, এটাই হল চিরন্তন সত্য। তারা কেন বিজাতিদের কালচারের অনুকরণ করবে? কিন্তু বর্তমানে মুসলিমরা তাদের আসল ঐহিত্য ও সংস্কৃতি হতে দূরে সরে যাওয়াতে বিজাতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি মুসলিম সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। তারা নিজেদের চাল-চলন ও ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে বিজাতি ও অমুসলিমদের চাল-চলন ঐতিহ্যে অন্ধ অনুকরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অথচ আল্লাহর মুসলিম উম্মতকে বিজাতিদের অনুকরণ করতে নিষেধ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত,  রাসূল সা. বলেন, « صوموا يوم عاشوراء وخالفوا فيه اليهود صوموا يوما قبله ويوما بعده »رواه أحمد وفيه محمد بن أبي ليلى وفيه كلام، ضعفه يحيى بن سعيد তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ! তোমরা ইয়াহূদীদের বিরোধিতা কর। আশুরাদের দিনের আগে একটি রোজা রাখ এবং পরের দিন একটি রোজা রাখ। [বর্ণনায় আহমদ]

 عن أبي سعيد الخدري عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : « لتتبعن سنن من كان قبلكم شبرا شبرا وذراعا بذراع حتى لو دخلوا جحر ضب تبعتموهم قلنا يا رسول الله اليهود والنصارى؟ قال: فمن ؟!!»

আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন,  তোমরা তোমাদের পূর্বের উম্মতদের গজ ও ইঞ্চি শুদ্ধ অনুকরণ করবে। এমনকি তারা যদি কোন গুই শাপের গর্তে প্রবেশ করে, তোমরাও তাদের অনুকরণে তাতে প্রবেশ করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কি ইয়াহু-দি ও খৃষ্টান? বলল, তারা ছাড়া আর কারা? !!

[11] আমাদের দেশে ধুতি পরিধান হিন্দুদের বৈশিষ্ট্য। সুতরাং, মুসলিমদের জন্য ধুতি পরিধান করা বৈধ নয়। অনুরূপভাবে হিন্দুরা গরুর গোস্ত খায় না। তাদের অনুকরণ করে গরুর গোস্ত খাওয়া হতে বিরত থাকা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। হিন্দুরা পানিকে জল বলে, তাদের অনুকরণ করে পানিকে জল বলা হতে বিরত থাকতে হবে। [অনুবাদক]।

[12] কিন্তু হিজরত করতে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য অমুসলিম দেশে বসবাস করার অনুমতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোন মুসলিমকে দেননি। কারণ হিজরতে বিধান অদ্যবধি বাকী আছে। তা বন্ধ হয়নি। রাসূল সা. বলেন,

« لا تنقطع الهجرة حتى تنقطع التوبة ولا تنقطع التوبة حتى تطلع الشمس من مغربها »

“যত দিন পর্যন্ত তাওবার দরজা খোলা থাকবে, ততদিন পর্যন্ত হিজরতের বিধান চালু থাকবে। আর তাওবার দরজা তখন বন্ধ হবে যখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হয়”। [অনুবাদক]।

[13] উল্লেখিত প্রতিটি কাজ মুসলিমদের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তারা এ সবের মাধ্যমে কাফেরদেরকে তাদের নিজেদের বিরুদ্ধে সুযোগ করে দেয়। আমরা তাদের যত সাহায্য সহযোগিতা করি না কেন, তারা আমাদের কোন উপকারে আসবে না। তারা যখনই সুযোগ পাবে আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করবে। তারা সব সময় তাদের অন্তরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিংসা বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ করে।  আর তোমরা যদি তাদের মহব্বত ও ভালো বাস, তারা কিন্তু তোমাদের মহব্বত করবে এবং তোমাদের ভালো বাসবে না। তারা প্রকাশ্যে তোমাদের সাথে মিশবে এবং দেখাবে যে, তারা তোমাদের বন্ধু, কিন্তু গোপনে তারা তোমাদের ক্ষতি করবে এবং তোমাদের বিরোধিতা করবে। [অনুবাদক]।

[14] আয়াতে একটি কথা স্পষ্ট হয়, তা হল কাফের, মুশরিক ও বেঈমানরা কখনোই মুসলিমদের বন্ধু হতে পারে না। তারা সব সময় মুসলিমদের শত্রু। প্রকাশ্যে তারা যদি তোমাদের বন্ধুত্ব দাবিও করে, তাদের কথার উপর আস্থা রাখা কোন মুমিনের কাজ নয়। তাদের প্রতিটি কাজকে সন্দেহের চোখে দেখতে হবে। তাদের সেবা, খেদমত, চিকিৎসা ও বাসস্থান বানানো সবকিছু আড়ালে অসৎ উদ্দেশ্য অর্থাৎ ধর্মান্তরিত করা লুকিয়ে আছে। [অনুবাদক]।

[15] মুসলিম শরীফে হাদীসের ইবারতটি এভাবে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রী আয়েশা রা. হতে বর্ণিন তিনি বলেন,

خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم  قِبَلَ بَدْرٍ فَلَمَّا كَانَ بِحَرَّةِ الْوَبَرَةِ أَدْرَكَهُ رَجُلٌ قَدْ كَانَ يُذْكَرُ مِنْهُ جُرْأَةٌ وَنَجْدَةٌ فَفَرِحَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم   حِينَ رَأَوْهُ فَلَمَّا أَدْرَكَهُ قَالَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم  : جِئْتُ لِأَتَّبِعَكَ وَأُصِيبَ مَعَكَ قَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم  : تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ قَالَ لَا قَالَ فَارْجِعْ فَلَنْ أَسْتَعِينَ بِمُشْرِكٍ قَالَتْ ثُمَّ مَضَى حَتَّى إِذَا كُنَّا بِالشَّجَرَةِ أَدْرَكَهُ الرَّجُلُ فَقَالَ لَهُ كَمَا قَالَ أَوَّلَ مَرَّةٍ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم   كَمَا قَالَ أَوَّلَ مَرَّةٍ قَالَ فَارْجِعْ فَلَنْ أَسْتَعِينَ بِمُشْرِكٍ قَالَ ثُمَّ رَجَعَ فَأَدْرَكَهُ بِالْبَيْدَاءِ فَقَالَ لَهُ كَمَا قَالَ أَوَّلَ مَرَّةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ قَالَ نَعَمْ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم   فَانْطَلِقْ.

অর্থ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের যুদ্ধে যখন যুদ্ধ করার জন্য বের হন, তখন তিনি যখন ‘হাররাতুল ওবারাহ’ নামক স্থানে পৌছেন, তখন সাহসিকতা ও বাহাদুরীতে প্রসিদ্ধ একে লোক তার সাথে যুদ্ধ করার জন্য মিলিত হল। তাকে দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীরা খুব খুশি হল। তারপর যখন লোকটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাত করল, তখন সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, আমি আপনার অনুসরণ করতে আসছি এবং আপনার সাথে যুদ্ধ করতে আসছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করে বললেন, তুমি আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর ঈমান আন কি? সে বলল, না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি চলে যাও আমরা কোন মুশরিক হতে সাহায্য গ্রহণ করি না। আয়েশা রা. বললেন, তারপর সে চলে গেল, তারপর যখন আমরা ‘সাজারাহ’ নামক স্থানে পৌছলাম লোকটি আবারো আমাদের সাথে মিলিত হল, তারপর সে এমন কথাই বলল, যা আগে সে বলছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাথে সে কথাই বললেন, যা পূর্বে তিনি তাকে বলেছিলেন। অর্থাৎ তুমি চলে যাও আমরা কোন মুশরিক থেকে সহযোগিতা গ্রহণ করব না। তারপর লোকটি চলে যায় এবং বাইদা নামক স্থানে এসে আবার মুসলিমদের সাথে মিলিত হয়। তারপর সে আগে যেভাবে কথা বলছিল ঠিক একই কথা আবার বলে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখ? এবার উত্তরে সে বলল, হ্যা। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তাহলে চল তুমি আমাদের সাথে যুদ্ধ কর। হাদিসটি ইমাম তিরমিযি সিয়ার অধ্যায়ে যিম্মিদের মুসলিমদের সাথে জিহাদ করার বিধান আলোচনায় বর্ণনা করেন। আর ইমাম আহমদ রহ. মুসনাদে আনসারের অবশিষ্ট অংশে আলোচনা করেন।

[16] দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী এর কোন স্থায়িত্ব নাই, এ দুনিয়ার সৌন্দর্য, ধন সম্পদ ও মালিকানা এগুলো সবই সাময়িক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এগুলো মানুষকে উপভোগ করা ও উপকৃত হওয়ার জন্য দিয়েছেন। আর যারা আল্লাহর এ সব নিয়ামতসমূহ উপভোগ করবে তাদেরকে অবশ্যই একদিন আল্লাহর নিকট জবাব দিতে হবে; আল্লাহ তাদের পরীক্ষা নিবেন। পরীক্ষা নেয়ার জন্য আল্লাহ দুনিয়াতে এ সব নেয়ামত দিয়েছেন। সুতরাং, এ সব নিয়ামতের বিনিময়ে আখিরাতকে ভুলে গেলে চলবে না। আল্লাহর দরবারে মুমিনদের জন্য যে রিযিক রাখা হয়েছে, তা অতি উত্তম ও স্থায়ী।

[17] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দুনিয়ার সৌন্দর্য উপকরণ গ্রহণ করতে নিষেধ করেননি, বরং তিনি বলেছেন এগুলো ঈমানদার লোকদেরই কাজ। তারা মানুষকে উন্নত সেবা দেবে, মানুষকে তারা পবিত্র রিয্‌ক উপার্জনের পথ দেখাবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জমিনের উপের ও নিচে তার কুদরতের যে সব নিদর্শন, ধন-সম্পত্তি, খনি ও উপকরণ রেখেছে, তা মুমিনরাই মানুষের কল্যাণে ব্যয় করবে।

[18] আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সবকিছুকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের অনুগত করে দিয়েছেন। মানুষ সবকিছুকে জয় করতে পারে এবং তারা সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা, বুদ্ধি ও কৌশল আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে দিয়েছেন।

[19] মুসনাদে আহমাদ, মুসনাদুশ শামীয়্যীনে।

3 comments on “ইসলামে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা – ১

  1. পিংব্যাকঃ ইসলামে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা | Tawheedullaah.com - তাওহীদুল্লাহ ইসলামিক ওয়েবসাইট | কুরআন সুন্নাহর প্রতিচ্ছবি

  2. Assalamualaikum w/r-w/b.Lekhata kuboi valo bishes kore amra zara muloto poribarer orthonoitik chahida puroner jonnoi omuslim deshe eshechi.somoy moto salat adai korte parina,dari rakhleo onek somossar mokabela korte hoy.Sontander valovabe islamic shikkhar poribesh korte parina,omuslimder k islamer dawat debar kaj o temon korina kintu amra muslimra amader esob kajgulu korar jonno masjid toiri kore salat adaier chesta kore thaki.Emotabosthai amader omuslim deshe obosthan kora somporke r ektu janale kuboi upokrito hobo.Allah (s.w.t)e kajer jonno aponake odik protidan korben.

    Like

মো: রাশিদুল হাসান খাঁন এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল